Dec 12, 2012

কর্ম-জীবনের তাড়াহুড়োয় এক পশলা কলকাতা

মাটি কে আঁকড়ে থাকার মত রসদ এখন আর এ মাটির নেই, তাই মাটির থেকে খানিকটা উর্ধে উঠে কলকাতায় অবতরণ করেছি জীবিকার প্রয়োজনে। গ্রীষ্মের সকালে ভিড়ে ঠাসা বাসে, শীতের দুপুরের মিষ্টি আঠালো রোদে, বিকেলের চায়ে বা বাড়ির কাছের চায়না টাউন-এ বেঁচে আছে আমার শহর কলকাতা। ভারি অদ্ভূত এই শহর। ততোধিক অদ্ভূত এখানকার মানুষগুলো। কখনো কখনো রাতের রাস্তায় চলতে থাকা ক্লান্তিমাক্ত নির্বাক নতমস্তক পথচারী গুলো কে দেখে মনে হয় এ যেন সেই শ্রমিক আন্দোলনের আগের এক প্রেক্ষাপট। আবার মাল্টিপ্লেক্সে বা নামি রেঁস্তরায় অবিরাম অকারণ উচ্ছসিত থাকা মুখগুলোয় ধাঁধা লেগে বোধ হয় - 'যাঃ বাবা, লন্ডন না তো?'

আমি 'জগত দেখা'-র মত কিছু এখনো দেখিনি। তাই এই আশপাশের আন্তরিক জগতটা বড়ই বিচিত্র আমার কাছে। আরো খানিকটা ভালো থাকার চেষ্টায় ছুটতে থাকা একটা প্রজন্মের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সংকল্প গুলো আমাকে বার বার ভাবায়। আজকের কবি 'আরব বেদুইন' এর সাথে তুলনা করতে পারবে না এই বাঙালি জাতি কে। বেদুইনরা তবু তে অন্তত বিশ্রাম নিত। এ বাঙালি তাও ভুলেছে। গতির এ এক অনাবিল আনন্দ। এখানে জীবন বাঙ্ময়, সাবলীল, স্বতঃপ্রচলিত, বর্নাঢ্য ও ব্যাপ্ত। না, তবেগড়ে  আমি কখনই কলকাতা কে বাংলার মুখ বলব না; বরং 'মুখোশ' তকমাটা একটু বেশি যথোচিত। কারণ বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ মিলেমিশে, বৈচিত্রময় প্রয়োজনে এখানে এক দুর্বোধ্য মিশেল সভ্যতা গড়ে তুলেছে। যারা হাসে, তারা কেউ কেউ হাসির খোরাকটা কানে লেগে থাকা মোবাইল ফোন থেকে পায়, কেউ বা আমাকে তার সম্ভাব্য খরিদ্দার ভেবে, আর আবার কেউ কেউ হাসিটা চর্চায় রাখার জন্যে হাসে। এ হাসিতে সেই সুখের অপ্লুতি নেই, নেই মুগ্ধতা বা সতঃস্ফুর্তি।